1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan Shanto : Rakibul Hasan Shanto
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

“বীরের জাতির অধঃপতনে মুনিয়ার বিজয়!” -নাইম ইসলাম নিবির

  • Update Time : রবিবার, ৯ মে, ২০২১
  • ৫৮১ Time View

পৃথিবীর ইতিহাসে নিজেদের অধিকার আদায়ে বাঙালি জাতির মতো এতো রক্ত বিসর্জন দেবার ঘটনা আর কোনো দেশ বা জাতির কোনোদিন হবে কিনা তাহা আমার বোধগম্যে ধরা দেয় না।

সেই পাকিস্তান সৃষ্টির আগ থেকেই আমরা বিভিন্নভাবে শোষিত নিপিড়ীত হয়ে আসছিলাম। কিন্তু পুরো শরীর জুড়ে যাদের হিম্মত আর বিজয়ের অবিনাশী চেতনা কে আছে বাছাধন ঠেকায় তাদের বিজয় বাসনা। যে জাতির মৃত্যু ভয় নেই সে জাতি বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা পোশক্তভাবেই রাখে। অন্যায় অপরাধ অপকর্ম ভন্ডামিসহ যেকোনো অপকর্ম রুখে দিতে পারে অকপটে।

বাঙালি জাতি যতবার নিজেদের মাঝে কোন্দল হিংসাত্মক আচরণ ভূলে গিয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত করে একত্রিত হতে পেরেছিল। ততবারই তারা যেকোনো বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম এবং দৃষ্টান্ত হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিল। যার একটি বৃহৎ উদাহরণ আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ। বিশাল বিশাল কামান গোলা বারুদ আর প্রশিক্ষিত পাকবাহিনীকে পরাজিত করতে এই বাঙ্গালী জাতি যেভাবে সুসংগঠিত আর ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো তা ইতিহাসের আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ এই বীরের জাতিই আজ অর্থবিত্ত আর ক্ষমতার কাছে হার মেনে যায় হরহামেশায়। অবৈধ ক্ষমতা, ভোগ বিলাসিতা, নিজস্ব সার্থ রক্ষার্থে আমাদের বীরত্বের বালাই ভূলে গিয়ে দুটি পয়সা নিজ পকেটে ভরবার জন্য আমরা খুন, গুম, ত্রাস, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী আর দূর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠেছি।

আমি যখন এসব বীরের অধঃপতনের কারণ বিচার বিশ্লেষণের ব্যকরণ ভূগোল জ্যামিতির সংমিশ্রণে সন্ধি করাতে ব্যস্ত ঠিক তখনই জানতে পারলাম গুলশানের একটি ব্যায়বহুল ফ্ল্যাট হতে মোসারাত জাহান মুনিয়া নামের একজন সুন্দরী রূপবতী মায়াবতী চিরল-কেশী অসম্ভব  সুন্দরী কিশোরীর লাশ উদ্ধার হয়েছে।

অতি উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে আমি যখন তার সুরোত খানা দেখলাম। সঙ্গে সঙ্গে একপশলা বৃষ্টি বয়ে গেলো আমার স্ব-তরুণ হৃদয় মাঝে বেদনার ঝর্ণা গড়িয়ে নানান জল্পনা কল্পনা আর জানা অজানা প্রশ্ন এসে ঠিকরিয়ে উঠল।

আমার সুদীর্ঘ ছাত্রজীবন আর রাজনৈতিক জীবনে সকল অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হলেও প্রেমের অভিজ্ঞতা ছিলো বরাবরই ধরা ছোঁয়ার বাইরে ক্ষেত্রবিশেষে অপরাধ বোধ্য কাজ কিন্তু এবার আমি সত্যি সত্যিই প্রেমে পড়ে গেলাম মুনিয়ার আত্মমর্যাদা, ব্যক্তিত্ববোধ আর সম্মানবোধ দেখে।

পাড়াগাঁয়ে বেড়ে ওঠা কলেজ পড়ুয়া একজন কিশোরী তার অবুঝ হৃদয়ে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার যে ধরনী এঁকে ছিলো। তা কোনো উদাহরণ দিয়ে তুলনা কিংবা পরিমাপ করে প্রয়াত মুনিয়ার নিকট অভিশপ্ত হবার কোনো স্বাধ, আল্লাদ, লোভ কিংবা সাহস কোনোটিই আমার না থাকলেও আছে বিশ্লেষণ করবার অবিনাশী চেতনার দূরদর্শীতা আর উদ্বেগ।

একাত্তরের ঘাতকদের ঘায়েল করতে আমাদের মাত্র নয় মাস সময় লাগলেও স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরে এসেও আমরা আমাদের নারী ক্ষমতায়ণ প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হয়েছি।

এই ব্যর্থ আর নষ্ট সমাজের ইতিবৃত্তে মুনিয়াদের জ্যোৎস্নার দূত স্মৃতির সাথে ঝরে গিয়ে আমাদের সভ্য ঘুমন্ত জাতির চোখে আঙ্গুল দিয়ে বিদায় নেয়। সমাজের লোভ লালসা আর অর্থ চিন্তায় মশগুল হয়ে আমরা আজ এতোটাই অন্ধকারে নিমজ্জিত জাতিতে পরিনত হয়ে পড়েছি যে কারো আবেগ অনুভূতি আর ভালোবাসার সরলতার সুযোগে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে আমাদের বিন্দুমাত্র লজ্জা হয়না। আমরা আজ পাপ কিংবা পাপী কোনোটিকেই ঘৃণা না করে উল্টো প্রশংসা আর খেতাব প্রদান করে তাদের লেজুড়বৃত্তি করাতেই আনন্দিত হয়ে উঠি। যার সুযোগে সমাজের প্রতিটি স্থানে মোসাররাত জাহান মুনিয়াদের জন্ম হয়। আর তাদের ভক্ষিত হয়ে অপমৃত্যুর স্বীকার হতে হয় কোনো এক নারীখাদকের কাছে। জীবনবৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকে তাদের কার্যকলাপ। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই যে- আমাদের সমাজে মুনিয়া’দেরকে বিশিষ্ট জনেরা বিভিন্ন বিশেষণে ভূষিত করে দ্বিজাতিতত্ত্বের সৃষ্টি করে মুনিয়া’র কারিগরদের পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করে চলেন দিব্যি।

যার ধারাবাহিকতা গত ২৮ শে এপ্রিলের পর হতে সর্বমহলে প্রখরভাবে লক্ষ্য করে বেদনা শিক্ত হয়েছিলাম।

শ্রদ্ধেয় সমালোচকগণের মাঝে বেশিরভাগই মুনিয়ার চরিত্র নিয়ে যে বিচার বিশ্লেষণ এবং অভিমত প্রদান করে নিজেদের বিচক্ষণতা প্রদর্শন করেছেন তা দেখে আমি গর্বিত হয়ে এক দৌড়ে বাসার বাইরে গিয়ে একগাদা বসুন্ধরার পণ্য নিয়ে বসুন্ধরা সিমেন্টে নির্মিত ভবনের অন্ধকারাচ্ছন্ন আমার শয়নকক্ষে প্রবেশ করে পুনরায় একা একা নির্জনে প্রবন্ধটি লিখতে বসলাম। হঠাৎ তাকিয়ে দেখি মুনিয়া আমার সামনে বসে আমার হাত, মুখ, চোখ, নাক চেপে ধরে উচ্চকন্ঠে বলতে লাগলো ‘নষ্ট ক্ষেত, নষ্ট মাঠ, নদী নষ্ট, বীজ নষ্ট, বড় নষ্ট যখন সংসার।।

তখন হঠাৎ কেন দেখা দেয় নিলক্ষার নীলে তীব্র শিস দিয়ে এতো বড় চাঁদ?’

বলেই তার প্রস্থান। আমি চোখে মুখে পানি দিয়ে মুনিয়ার বলা বাক্যাংশগুলোর লুকায়িত মাহাত্ম্য আর পর্যালোচনার আদ্যপান্ত খোঁজ করতে গিয়ে কানের কাছে শুনছি কে যেনো বলে চলেছে- মুনিয়ারা এ সমাজের অভিশাপ। তারা চরিত্রহীনা। তারা পতিতা। তারা রক্ষিতা। তারা ধনীক শ্রেণীদের বশবর্তী করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চায়। তারা লোভী। তারা পরিবার, রাষ্ট্র এবং সমাজবিশৃঙ্খলার মূল!

নিঃসন্দেহে মুনিয়ারা সমাজবিশৃঙ্খলার মূল কারণ তারা খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষের পেটে লাথি মেরে শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত করে আঙুল ফুলে কলা গাছে পরিনত হয় না। মুনিয়ারা ব্যাংক লুটপাট করে বিদেশে বেগম পাড়ায় পারি জমায় না। তারা সুদ, ঘুষ, জুয়া, জবর দখল, জমি দখল করে জণগণের জানমালের দিকে কুদৃষ্টিপাত করে গৃহহীন করে না। তারা ক্যাসিনো কান্ড, বালিশ কান্ড, কয়লা কান্ড করে অসংখ্য পরিবারকে সম্বলহীন করে না। অবৈধভাবে দুপয়সা উপার্যনের জন্য তারা দিনকে রাত ও রাতকে দিনে রুপান্তরিত করে না। তারা আইন আদালত বিচার বিভাগের চোখে ধুলো দিয়ে পেশি শক্তির জোর দেখিয়ে নদী দখল, ভূমি দখল, বাড়ি দখল করে ভূমি দস্যু জলদস্যু অথবা শীর্ষ শিল্পপতি হয়ে ওঠে না। তাইতো মুনিয়ারাই এসমাজের বড় অপরাধী; সমাজ বিশৃঙ্খলার মূল।

আমি বলি ক্ষতি কি ভালোবাসার অপরাধে কেউ যদি চরিত্রহীনার আখ্যা পায়। কেউ যদি  বিশ্বাসের প্রতিদান স্বরুপ নষ্টাদের তালিকায় চলে যায়। তাহলে এই নষ্টামির সর্বোচ্চ শাস্তি হয়তো মৃত্যুদন্ড দেয়া যায়। কিন্তু যে নিজের ভূল বুঝতে পেরে নিজেই আত্মহননের পথ বেছে নেয় তার প্রতি আমাদের সকলের শ্রদ্ধা জানানো ঈমানী দায়িত্ব হয়ে যেমন দাঁড়ায়। তেমনি প্রতারক প্রেমিকের কি দন্ড হতে পারে তাহা ইতিপূর্বে অনাগত দিনগুলোতে দৃষ্টিপাত করলে সুস্পষ্ট হয়ে ভেসে ওঠে।

তবে মুনিয়ার মতো বীরত্ব প্রদর্শন করে ব্যক্তিত্ব বোধ জাগ্রত করে যদি সকলে নিজ নিজ চুরি-চামারি, খুন-খারাবি, প্রতারণা-জালিয়াতির কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হয়ে আত্মহননকে বেছে নেয় তাহলে আমার বিশ্বাস  জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান হবে সবচেয়ে ছোট। এমনকি কিছু কিছু পেশায় দায়িত্বশীল লোকের পদে শূন্যতা দেখা দেবে। কবরস্থানে লাশের মিছিলে জায়গার সংকুলান দেখা দেবে। ফলশ্রুতিতে আমাদেরকে তারিখ ঠিক করে আত্মহনন করতে হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তাহলেই কেবল এদেশের আকাশে বাতাসে আবারও শ্যামল শীতল হাওয়া বইতে থাকবে। অরণ্য হবে আরও সবুজ, নদী হবে আরও কল্লোলিত। কর্ণফুলী ধলেশ্বরী পদ্মা জলাঙ্গীরে আবার দেখা দেবে শঙ্খচিল। কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল গাছে ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জেগে উঠবে অরুণ। আবার কবিরা জন্মাবে, কবিতার ছন্দে মুখরিত হয়ে উঠবে চারিপাশ।

আমাদের লোভ লালসা আর বিকারগ্রস্থতা থেকে এই সমাজে প্রতিদিন হাজারো মুনিয়া তৈরি করছি। জীবন যৌবিকতার টানে মুনিয়ারা নিরুপায় রক্ষিতা রয়ে যায়। মুনিয়ারা এই নষ্ট সমাজেরই ফসল। যে ফসল আমরাই উৎপাদন করে মুখোশ পড়ে জ্ঞানী গুণী আর বিশিষ্ট সেজে তাদেরকেই দোষারোপ করে বেড়াই। কলঙ্কিত ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়ে বীরের জাতি হিসেবে খ্যাতি লাভ করা আমারই আজ অর্থবিত্তের কাছে অতি সহজেই নিজেদের বিক্রি করে দেই। যার চেয়ে বড় অধঃপতন আর কিছু হতে পারে না। মুখোশ পড়া ধর্মীয় নেতা কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের চেয়ে কিংবা দুর্নীতিগ্রস্থ একজন ব্যক্তির চেয়ে মুনিয়ারা লক্ষ্য কোটি গুণ ভালো এবং পবিত্র। আমাদের এই নষ্ট সমাজের অপরাধগ্রস্থ প্রতিটি মানুষের চেয়ে মুনিয়ারা অধিক সম্মানিত ও আত্মমর্যাদা পূর্ণ বলেই তারা আত্মহত্যার মাধ্যমে নষ্ট সমাজ থেকে নিজেদের জীবনের ইতি টেনে বিদায় নেন।

মুনিয়াদের অপরাধ তারা ধনাঢ্য ব্যক্তি বর্গের প্রেমে পড়ে কিংবা রক্ষিতা হিসেবে নিজেদের বিক্রি করে দেয়। অথচ মুনিয়া যদি বসুন্ধরার অভিযুক্ত ব্যক্তিটিকে বিবাহ করে সুখে শান্তিতে ঘর করতে পারতো। তাহলে এই সমালোচকদিগের মাঝ থেকে কেউ কেউ তাদের বিবাহবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচছা জানাতে যেতেন। কেহবা একটি চাকুরী কিংবা পদোন্নতির আশায় সোনাদানা হিরা জোহরাত খচিত দামি দামি শাড়ী, গহনা থেকে শুরু করে অন্তর্বাস পর্যন্ত উপহার নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ওয়েটিং রুমে বসে ম্যাডাম ম্যাডাম বলে সেলফি তুলে।  জুতোর তলা খসিয়ে হাপিত্যেশ করে বাড়ি ফিরতেন। কেউ কেউ আবার মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে আমন্ত্রণ করতেন।

সুতরাং মুনিয়া’দের চরিত্রহননকারী পীর আউলিয়াখ্যাত বনি আদমদের বোঝানোর ক্ষমতা একমাত্র পীড় আউলিয়া ছাড়া অন্য কাহাদিগের আছে কিনা তাহা আমার ক্ষীণস্বকরুন হৃদে বুঝ হয়না। তাইতো মুনিয়ারা এই নষ্ট ক্ষেত, নষ্ট মাঠ, নষ্ট নদী, নষ্ট বীজ, আর নষ্ট সংসারের মাঝে নীলক্ষার নীলে চাঁদ হয়ে তীব্র শিস দিয়ে আমাদের অধঃপতন দেখিয়ে বিজয়ীর বেশে বিদায় নেয়। আমরা তা না বুঝে অপবাদের পান্ডুলিপি বের করে নিকৃষ্ট উপাধির খোঁজ করতে থাকি আর রাতের অন্ধকারে মুনিয়াদের প্রতি আমাদের কাম ললসার বীজ বুনতে থাকি।

আমার আজকের আলোচনার পরিসমাপ্তিতে অন্যকোনো দিন কিংবা অন্যকোনো রাতে আবারও মুনিয়ার সাথে প্রেম, ভালোবাসা,বন্ধুত্ব আর আত্মহত্যার করুণাতিক্ত কথোপকথনের প্রত্যাশা নিয়ে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এই প্রবন্ধের ইতি টানলাম।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..